নবজাতকের ঠান্ডা লাগার লক্ষণ

একটি নবজাতক শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক মাস সবার জন্য বিস্ময়, আনন্দ এবং উত্তেজনার সময় মনে হতে পারে। তবে এ সময়টি তার জন্য উদ্বেগের কারনও হতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি শিশুর স্বাস্থ্যের ব্যাপার হয়। একটি সাধারণ অসুস্থতা যা অনেক নবজাতক শিশুর হয় তা হল কমন কোল্ড বা সাধারণ সর্দি। যদিও এটি ছোটখাটো অসুস্থতা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সর্দি একটি নবজাতকের জন্য বিশেষভাবে কষ্টকর। এর ফলে শিশুর শ্বাস নিতে, খেতে এবং ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে। আজকে আমরা নবজাতকের সর্দি-কাশির লক্ষণ, এর কারণ এবং বাবা- মা তাদের শিশুদের ভালো রাখতে কি কি করতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করব।

নবজাতকের ঠান্ডা কি?

সর্দি হল একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে নাক, গলা এবং সাইনাস রয়েছে। ঠান্ডার ভাইরাস নাকের শ্লেষ্মা এবং লালার ক্ষুদ্র ফোঁটাগুলির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির সময় বাতাসে নির্গত হয়। শিশুদের খেলনা বা কম্বলে ঠান্ডার ভাইরাস থাকলে তা স্পর্শ করার মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে।

নবজাতকের যে কোনো সময় সর্দি লেগে যেতে পারে, তবে জন্মের পর প্রথম দুই থেকে তিন মাস তারা সংক্রমণের জন্য বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এর কারণ হল তাদের ইমিউন সিস্টেম তখনও সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় না এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কার্যকরভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম নয়।

নবজাতকের সর্দির লক্ষণ

নবজাতকের সর্দির লক্ষণগুলি সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

সর্দি বা নাক বন্ধ থাকা:

সর্দিতে আক্রান্ত নবজাতকের সর্দি বা নাক বন্ধ থাকতে পারে। শ্লেষ্মার রঙ প্রথমে পরিষ্কার সাদা হতে পারে কিন্তু পরে আরও ঘন এবং হলুদ বা সবুজ রঙের হতে পারে।

হাঁচি:

সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত নবজাতক ঘন ঘন হাঁচি দিতে পারে কারণ তাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠান্ডার ভাইরাসটি নিজ থেকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করে।

কাশি:

সর্দির কারণে নবজাতকদের শুকনো বা ভেজা কাশি হতে পারে, যা তাদের অপরিণত শ্বাসনালীর জন্য বিশেষভাবে কষ্টদায়ক হতে পারে।

জ্বর:

100.4°F (38°C) বা তার কম মাত্রার সর্দি সহ জ্বর থাকতে পারে।

ঘুমের অসুবিধা:

সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত নবজাতকের নাক বন্ধ থাকা, কাশি বা জ্বরের কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

খেতে অসুবিধা:

শ্বাস নিতে সমস্যা এবং গলা ব্যথা নবজাতকের জন্য স্তন্যপান করা এবং গিলে ফেলা কঠিন করে তুলতে পারে।

অস্বস্তি:

ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে নবজাতকের মধ্যে বেশিরভাগ সময় অস্বস্তি ও খিটখিটে ভাব প্রকাশ পায়।

যদি একটি নবজাতক শিশুর মাঝে এই ঠাণ্ডাজনিত রোগের লক্ষণগুলির কোনটি প্রকাশ পেতে দেখা যায়, তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ভালো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিত্সা এবং প্রতিরোধ

নবজাতকের সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য কোন প্রতিকার নেই। তবে এমন কিছু পদক্ষেপ রয়েছে যা অনুসরণ করে পিতামাতারা তাদের নবজাতকদের ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ এবং দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে:

বিশ্রাম:

শিশুদের শরীরকে ঠান্ডার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করার জন্য তাদের প্রচুর বিশ্রাম এবং ঘুম দরকার।

হাইড্রেশন:

শিশু যেন হাইড্রেটেড থাকে তা নিশ্চিত করতে আরও ঘন ঘন বুকের দুধ বা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ান।

সাকশন:

শিশুর নাক থেকে আলতো করে শ্লেষ্মা বের করার জন্য একটি বাল্ব সিরিঞ্জ বা নাসাল অ্যাসপিরেটর ব্যবহার করুন।

আর্দ্রতা:

ঘরে ঠাণ্ডা মিস্ট হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন যাতে বাতাসে পর্যাপ্ত আদ্রতা থাকে ও শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়।

ওষুধ:

শুধুমাত্র একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন। ওভার-দ্য-কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশান ছাড়া যেসব ওষুধ আছে সেগুলো 6 মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য ব্যবহার উপযোগী না।

প্রতিরোধ:

বাসার সব সদস্য ঘন ঘন হাত ধোয়া, ফ্লোর পরিষ্কার রাখা এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানোর মাধ্যমে ঠান্ডার ভাইরাসের বিস্তার রোধের চেষ্টা করুন।

শেষে বলা যায়, সর্দি হওয়া একটি নবজাতকের জন্য সামান্য কিন্তু কষ্টদায়ক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। নবজাতক শিশুর সর্দি বা বন্ধ নাক, হাঁচি, কাশি, জ্বর, ঘুমাতে বা খাওয়াতে অসুবিধার মতো লক্ষণগুলির প্রতি পিতামাতার নজর রাখাতে হবে। যদি কোনো নবজাতক এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি প্রকাশ করে, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারে পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *