রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বৃদ্ধির উপায়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের রোগ, ইনফেকশান, ক্ষত ও অন্যান্য ক্ষতিকর অনুপ্রবেশকারী রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে আমাদের দেহ স্বাভাবিকভাবে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে সেটা।

ইমিউনিটিকে বলা হয় দেহের ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স বা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী সর্বপ্রথম স্তরের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। দেহকে সুস্থ্য রাখতে ইমিউনিটি সিস্টেম বিভিন্ন কোষ, টিস্যু ও অর্গানের সমন্বয়ে একটি জটিল প্রতিরোধী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এটি মানব দেহের একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

ইমিউন সিস্টেমের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে দেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন বিভিন্ন উপাদান যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, পরজীবী, প্যাথোজেন ইত্যাদি সনাক্ত করে ধ্বংস করা।

কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকসময় ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়তে পারে যা তখন আমাদের অসুস্থ্যতা ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিনের উন্মুক্ত পরিবেশে থাকা বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ও টক্সিনের বিরুদ্ধে কাজ করে সবসময় একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম ধরে রাখা খুব সহজ কাজ নয়।

তবে সৌভাগ্যবশত বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে আমরা আমাদের দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে পারি এবং দেহকে সুস্থ্য রাখতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইমিউনিটি বুস্টিং প্রসেস এক বা দুদিনে বৃদ্ধি করা যায় না, এটি আজীবন ধরে চলমান একটি প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘ সুফল লাভের জন্য আমাদের ডেইলি লাইফে এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে আয়ত্বে আনতে হবে ও নিয়মিত চর্চা করে যেতে হবে। তবেই আমরা ইমিউনিটি বাড়াতে পারব এবং বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে পারব।

আজকে আমরা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে হেলদি লাইফস্টাইল, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ইত্যাদি থাকবে।

ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করেঃ

যখন রোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, প্যাথোজেন ইত্যাদি দেহে প্রবেশ করে তখন তারা দেহের টিস্যু ও কোষকে আক্রমণ করে ড্যামেজ করে ইনফ্ল্যামেশান ও বিভাজন ঘটায়।

বাতাস, খাবার, পানি, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ইত্যাদি মাধ্যম থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং তখনই ইমিউন সিস্টেম এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইমিউন সিস্টেম দুই ধরণের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, একটি সহজাত এবং আরেকটি অভিযোজিত। সহজাত ব্যবস্থা হলো প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ যা যেকোনো ফরেন বডি বা দেহের জন্য নতুন এমন উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আর অভিযোজিত ব্যবস্থাটি পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে।

এভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ভালো ইমিউন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তাঃ

সর্বোপরি সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ইমিউন সিস্টেম খুবই জরুরি। ইমিউন সিস্টেম দেহকে রোগ জীবাণু ও অন্যান্য ক্ষতিকর অনুপ্রবেশকারী থেকে রক্ষা করে। যথাযথ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে দেহ রোগজীবাণু থকে অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং অসুস্থ্যতা সারতে তখন বেশি সময় লাগে।

ভালো ইমিউন সিস্টেম থাকা জরুরি হওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলোঃ ইনফেকশান থেকে সুরক্ষা, বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি কমানো, দ্রুত আরোগ্য লাভ, দীর্ঘ সুস্থ্য জীবন, উন্নত স্বাস্থ্য ইত্যাদি।

ইমিউনিটি দুর্বল হওয়ার কারণঃ

বিভিন্ন কারণে ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন আমরা সহজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলোঃ

১/ নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাসঃ যেসব ডায়েটে বেশিরভাগই প্রসেসড ফুড এবং পুষ্টিমান কম, অতিরিক্ত চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি এমন খাবার খাওয়ার ফলে দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না এবং ইমিউনিটি বাড়াতে পারে না।

২/ ব্যায়াম না করাঃ নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলা না করলে দেহে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হয় এবং ব্লাড সার্কুলেশান কম হয়। ফলে ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩/ ঘুমের স্বল্পতাঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ইমিউন বাড়ানোর প্রয়োজনীয় হরমোন ও সাইটোকাইন তৈরি হয় কম।

৪/ মানসিক চাপঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইমিউনিটি না বাড়িয়ে স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে দেয় যা প্রদাহ বাড়িয়ে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধে ব্যাঘাত ঘটায়।

৫/ ধূমপান ও মদ্যপানঃ ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে রোগ প্রতিরোধী কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইমিউন বৃদ্ধিতে সহায়ক পুষ্টি উপাদান তৈরি হয় না।

৬/ দুরারোগ্য ব্যাধিঃ ডায়বেটিস, হৃদরোগ ও বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধি থাকলে ইমিউনিটি বাড়তে প্রয়োজনীয় হরমোন কম তৈরি হয়।

৭/ বিভিন্ন মেডিসিনঃ কিছু নির্দিস্ট মেডিসিন যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড ও কেমোথেরাপি মেডিসিন ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

৮/ বয়সঃ বয়স বৃদ্ধি পেলে ইমিউন সিস্টেম স্বভাবতই দুর্বল হয়ে পড়ে কারণ তখন রক্ত কম তৈরি হয়। ইমিউনিটি দুর্বল হওয়ার কারণগুলো খুঁজে পাওয়ায় আমরা এসব অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস থেকে দূরে থেকে ইমিউনিটি বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করতে পারব।

ইমিউনিটি বৃদ্ধির উপায়ঃ

ইমিউনিটি বৃদ্ধির অনেক উপায় আছে যেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা সহজেই সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে পারি
এবং আক্রান্ত হওয়ার আগেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে পারি।

নিচে আমরা ইমিউনিটি বাড়াতে এবং সেই সংগে সর্বোচ্চ সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার ন্যাচারাল ও আর্টিফিশিয়াল উপায়গুলো ডিটেইল্ডভাবে আলোচনা করছি।

১/ হেলদি ডায়েট সিস্টেমঃ হেলদি ডায়েট ইমিউনিটি বুস্ট করতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবারে থাকা ভিটামিন, মিনারেলস ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট আমাদের ইনফেকশান ও বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কিছু অন্যতম ইমিউন বুস্টিং খাবার হলোঃ

 সাইট্রাস বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ সাইট্রাস ফ্রুট যেমন কমলা, লেবু, আঙুর, লটকন, বড়ই, পেয়ারা(নন সাইট্রাস) ইত্যাদি ভিটামিন সি এর খুব ভালো এবং সহজলভ্য উৎস যা ইউমিউন ফাংশানের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

 বেরিঃ বেরি বা জাম জাতীয় ফল, স্ট্রবেরি, রাসবেরি, ব্লু-বেরি ইত্যাদি একটু দামী ফল তবে এরা এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা সেল ড্যামেজ রোধ করে।

 শাকসবজিঃ সব ধরণের শাকসবজি তবে বিশেষ করে সবুজ পাতার শাকসবজি যেমন পুঁইশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ।

 রসুনঃ রসুনে থাকা বিভিন্ন মিনারেল যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, অ্যালিসিন ও অন্যান্য উপাদান প্রচুর এবং এরা দেহে রক্ত চলাচল বাড়াতে, সর্দি কাশি, ফ্লু, জ্বর ইত্যাদি প্রতিরোধ করে ও ইমিউনিটি বাড়ায়।

 আদাঃ আদায় ভিটামিন সি, এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যা, জ্বর, কফ, মাথাব্যথা, হজমে সমস্যা, ফ্লু ইত্যাদি প্রতিরোধ করে ও আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 মাশরুমঃ ইমিউনিটি বুস্টিংয়ে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধরণের মাশরুম তাদের মেডিসিনাল প্রপার্টির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাশরুমে থাকা বেটা গ্লুক্যান ইমিউন সেল তৈরিতে সহায়তা করে। তাছাড়া মাশরুমের বিভিন্ন এন্টিভাইরাল গুনাগুণ ও ইনফেকশানের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে।

২/ পর্যাপ্ত ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি দেহে নতুন ইমিউন সেল তৈরি করে, হাড় মজবুত করে, আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়, ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে ব্যস্ত জীবনযাপনের কারণে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না। তবে আমরা সহজেই সূর্যের আলো, বিভিন্ন ফুড সাপ্লিমেন্ট এবং সাধারণ খাদ্য যেমন চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম দুধ ইত্যাদি থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পেতে পারি যা ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৩/ পর্যাপ্ত পানি পানঃ পানিই হচ্ছে আমাদের দেহের মূল উপাদান। আমাদের দেহের প্রায় ৬০% এর বেশি হচ্ছে পানি। পানি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। পানি দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় ও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেলকে ডিটক্সিফাই করে সুস্থ্য রাখে। আমাদের ডেইলি অন্তত আট গ্লাস বা প্রয়োজনে তার বেশি পানি পান করা উচিত। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত নয়।

৪/ পর্যাপ্ত ঘুমঃ সর্বোপরি সুস্বাস্থ্যের জন্য, বিশেষ করে ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই প্রয়োজন। ঘুমানোর সময় আমাদের দেহে সাইটোকাইন নামে একধরণের প্রোটিন তৈরি হয় যা ইনফেকশান ও প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। ঘুম আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, মানসিক চাপ হলো দুর্বল ইমিউনিটির অন্যতম কারণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা সাউন্ড স্লিপ প্রয়োজন। ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিনের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

৫/ নিয়মিত ব্যায়ামঃ ইমিউনিটি মেইন্টেইন করতে নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই জরুরি। নিয়মিত ব্যায়্যাম করলে ইমিউন সেল তৈরির সিস্টেম উদ্দীপিত হয় এবং ইনফ্ল্যামেশান বা প্রদাহ দূর হয়। ব্যায়াম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়তা করে এবং চাপ কমায়। প্রতিদিন সাধারণত
কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ও ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী।

৬/ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাঃ মানসিক চাপ ইমিউনিটি বৃদ্ধির পথে অন্যতম বাঁধা। যখন আমরা মানসিক চাপ অনুভব করি তখন দেহে কর্টিসল নামক এক ধরণের স্ট্রেস হরমোন তৈরি হয় যা ইমিউন সিস্টেমের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাঁধা দেয়। তাই আমাদের নিজেদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে এবং ব্যায়াম, মেডিটেশান, ডিপ ব্রীদিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা ইত্যাদি মেন্টাল প্রেশার কন্ট্রোলিং সিস্টেমের অভ্যেস করতে হবে।

৭/ ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকাঃ ধূমপান ও মদ্যপান দেহের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দেয় এবং ইনফেকশান ও নানাধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপান হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্ট্রোক, হাই প্রেশার ইত্যাদি রোগের অন্যতম কারণ। মদ্যপানের ফলে লিভার সিরোসিস, কিডনি ড্যামেজ, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা এবং আরও নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। অতএব সুস্বাস্থ্য ও ইমিউনিটি বৃদ্ধির স্বার্থে আমাদের ধূমপান ও মদ্যপান এবং অন্যান্য বাজে অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮/ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ রোগজীবাণু ও ইনফেকশানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন মেইন্টেইন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত গোসল ও রাতে-দিনে দু বার দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করতে হবে। আমাদের সময়মতো হাত ধোয়া বিশেষ করে খাও্য়ার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পর ও চোখ মুখ স্পর্শ করার আগে পরিষ্কার পানি ও সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। হাঁচি কাশি দেয়ার সময় নাক মুখ ঢেকে নিতে হবে এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তির খুব কাছে না গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। অসুস্থ্য হলে নিয়ম মেনে মেডিসিন খেতে হবে এবং সংক্রামক রোগ হলে নিজেদের আইসোলেশানে রাখতে হবে।

৯/ রোগমুক্ত থাকার চেস্টাঃ বিভিন্ন ক্রনিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, হৃদরোগ ইত্যাদি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত চেক আপ, মেডিসিন গ্রহণ, ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব ক্রনিক রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

১০/ উপকারী হার্বালঃ বিশেষ কিছু হার্বাল যেমন Astragalus, Echinacea, Elderberry ইত্যাদি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর। এসব হার্বাল দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে, জ্বর, কাশি, সর্দি, ফ্লু, ফুসফুসজনিত সমস্যা, ইনফেকশান ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে। প্রাচীনকাল থেকে ট্রেডিশন্যাল চাইনিজ মেডিসিন হিসেবে এসব হার্বাল উপাদান ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব হার্বাল ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এতে সাইড ইফেক্ট ও অন্যান্য মেডিসিনের সাথে কাজ করে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো এসব হার্বাল সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের পূর্বে একজন স্পেশালিস্টের সাথে আলোচনা করে নেয়া।

১১/ হার্বাল টিঃ হার্বাল টি বা চা হলো ইমিউন সিস্টেম বুস্ট করার একটি সুস্বাদু উপায়। বিভিন্ন পপুলার হার্বাল টি যেমন আদা চা, গ্রীন টি, মাচা টি, মরিংগা টি ইত্যাদি পান করা ইমিউনিটি বুস্টিং এবং ওয়েট কমাতে খুবই উপকারী। হার্বাল টি-তে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান ইমিউনিটি বাড়ায় এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।

১২/ প্রোবায়টিকসঃ প্রোবায়োটিক হলো দেহের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা দেহের পরিপাকতন্ত্রের জন্য সহায়ক। এরা এন্টিবডি ও অন্যান্য ইমিউন সেল সিস্টেমের প্রোডাকশান বাড়াতে স্টিমুলেটর হিসেবে কাজ করে যা দেহের ইমিউনিটি বাড়ায়। বিভিন্ন ফার্মেন্টেড খাবার যেমন দই, পান্তা ভাত, পনির, এপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি প্রোবায়োটিকের কাজ করে। এছাড়া প্রোবায়োটিক হিসেবে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টও ডাক্তাররা প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

১৩/ ভিটামিন সাপ্লিমেন্টঃ হেলদি ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। বিশেষ করে ভিটামিন সি, ডি ও ই ইমিউন সিস্টেম ডেভেলাপ করার জন্য অপরিহার্য। এসব ভিটামিন আমরা আমাদের স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট থেকে সহজেই পেতে পারি।

১৪/ ভ্যাক্সিন নেয়াঃ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগ এবং ইনফেকশান প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন অন্যতম হাতিয়ার। ভ্যাক্সিন দেহের ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এন্টিবডি তৈরি করে যা নির্দিস্ট প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে এভেইলেবল সব ধরণের ভ্যাক্সিন গ্রহণ করে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই নিজেদের রোগের বিরুদ্ধে দেহকে প্রস্তুত রাখতে।

১৫/ আর্টিফিশিয়াল উপায়ঃ আর্টিফিশিয়াল বা কৃত্রিম উপায়েও ইমিউনিটি বাড়ানো যায় যাতে বিভিন্ন মেডিসিন, থেরাপী ও নির্দিস্ট মেডিক্যাল প্রসিডারের মাধ্যমে মূলত ইমিউন সিস্টেমকে টার্গেট করা হয়। এমন কিছু মাধ্যম হলোঃ

ইমিউনোথেরাপীঃ ইমিউনোথেরাপী মূলত ক্যান্স্যার ট্রিটমেন্টে ব্যবহৃত হয়। তখন মূলত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে কিংবা একে ক্যান্সার সেলের সাথে পরিচিত করে তা আক্রমণ করতে নির্দেশিত করা হয়। ইমিউনো থেরাপির মধ্যে রয়েছে চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর, কার-টি সেল থেরাপি, মনোক্লোনাল এন্টিবডি ইত্যাদি।

 ইমিউনো স্টিমুলেটরঃ ইমিউনো স্টিমুলেটর হলো কিছু মেডিসিন বা সাপ্লিমেন্ট যা ইমিউনিটি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারফেরন, ইন্টেরলিউকেইন ইত্যাদি।

 স্টেম সেল থেরাপিঃ স্টেম সেল থেরাপি হলো দেহের অসুস্থ বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জাকে সুস্থ্য স্টেম সেল দ্বারা মেডিক্যাল উপায়ে প্রতিস্থাপিত করা। স্টেম সেল ইমিউন সেল সহ দেহের সব ব্লাড সেল তৈরির কাজ করে। দুর্বল ইমিউন সিস্টেম বা বিশেষ করে ক্যান্সারের পর দেহকে পুনরায় রোগ প্রতিরোধী করে তুলতে স্টেম সেল থেরাপী ব্যবহার করা হয়।

এসব প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায় সঠিকভাবে ব্যবহার করেই মূলত আমরা ইমিউনিটি বাড়াতে ও সুস্থ্য থাকতে পারি। আর সর্বোপরি সুস্বাস্থ্যের জন্য সবসময় ইমিউনিটি ধরে রাখা খুবই জরুরি।

শেষ কথাঃ সুস্থ্যতার জন্য ও রোগের বিরুদ্ধে দেহকে প্রতিরোধী করতে ইমিউনিটি বুস্ট করা গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ইমিউন সিস্টেম দেহকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস ও অন্যান্য প্যাথোজেন থেকে রক্ষা করে। কিন্তু ইমিউনিটি বুস্টিং কোনো রাতারাতি হওয়ার ব্যাপার নয় এবং এর জন্য কোনো ম্যাজিক্যাল ফুড বা সাপ্লিমেন্টও নেই, এটি একটি নিয়মিত অভ্যাসের ব্যাপার। যেমন আমরা আগেই বলেছি যে প্রপার ডায়েট, ব্যায়াম, ঘুম, চাপমুক্ত থাকা, পরিচ্ছন্নতা, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, সামাজিকভাবে যুক্ত থাকা ইত্যাদি উপায়ে লাইফস্টাইল ডেভলাপ করে ইমিউনিটি ধরে রাখা যায়।

তবে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে বিভিন্ন ফ্যাক্টর যেমন বয়স বৃদ্ধি, ক্রনিক রোগ, কিছু রোগের চিকিৎসার কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেকসময় ভ্যাক্সিন বা ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেমকে পুনরায় কার্যকর করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে ইমিউন সিস্টেম বুস্ট করতে কোনো আর্টিফিশিয়াল মেথড ব্যাবহারের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য নিজেদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি চেইঞ্জ করে এবং ডেইলি লাইফে আমাদের পূর্বে আলোচিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো যুক্ত করে আমরা ইমিউনিটি বুস্টিং সিস্টেম তথা দেহের সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ব্যাবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *