কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায়

কিডনিতে পাথর হওয়া একটি সাধারণ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ডিসঅর্ডার বা মূত্রনালির রোগ যা বেশ ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে শুরুতেই তা শনাক্ত করা যায় এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়। এই আর্টিকেলে আমরা কিডনিতে পাথর হয়েছে কি না তা বোঝার মূল লক্ষণগুলো নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। এ লক্ষণগুলোর সাথে পরিচিত হলে শুরুতেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কিডনিতে পাথর আছে কি না এবং তা চিকিৎসার প্রয়োজন কি না।

কোমরের দু’পাশে ও তলপেটে ব্যথাঃ

কিডনিতে পাথর হওয়ার একটি অন্যতম লক্ষণ হলো প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া। সাধারণত দেহের পাঁজরের নিচে ও কোমরের দুই পাশে ব্যথা শুরু হয়। এ ব্যথা তলপেটে ও গ্রোয়েন এরিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথা এমনভাবে অনুভূত হয় যেন তা তীক্ষ্ণ, টান পড়া, কাঁপুনি কিংবা ঢেউয়ের মতো দেহে ছড়িয়ে পড়ছে।

হেমাটোরিয়াঃ

প্রস্রাবে রক্ত আসাকে মেডিক্যালি হেমাটোরিয়া বলে, যা কিডনিতে পাথর হওয়ার একটি কমন লক্ষণ। তখন প্রস্রাবের রঙ দেখতে গোলাপি, লাল অথবা বাদামী হতে পারে। তবে অনেকসময় অন্যান্য রোগের কারনেও প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসতে পারে, তাই এর মূল কারণ প্রথমে চিহ্নিত করা জরুরি।

প্রস্রাবে পরিবর্তনঃ

কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাবে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছেঃ

খুব কম পরিমাণে প্রস্রাব আসা, প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত প্রস্রাবের বেগ, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ধোঁয়াটে ও বাজে গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, প্রস্রাবে অসুবিধা এবং সম্পূর্নভাবে প্রস্রাব শেষ করতে না পারা।

ব্যথা ওঠানামা করাঃ

কিডনিতে পাথরের ফলে সৃষ্ট ব্যথা ওঠানামা করে এবং ব্যথার স্থান ও তীব্রতার পরিবর্তন হয়। কিছু সময় মৃদু ও সহনীয় পর্যায়ের ব্যথা হয় কিন্তু কিডনির পাথর নড়লে বা মূত্রনালির পথ রোধ করার সময় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। ব্ব্যথার ওঠানামা কিডনিতে পাথর হওয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ।

বমিঃ

কিডনিতে পাথর হলে বমির ভাব ও বমি হতে পারে। কিডনিতে থাকা পাথরের কারণে যে ব্যথা ও অস্বস্তি হয় তা থেকেই দেহ মূলত এ বমির প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। বমির সাথে ব্যথার তীব্রতাও বাড়তে পারে।

অন্যান্য লক্ষনঃ

কিডনির পাথরের আকার ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে ব্যথাসহ অন্যান্য লক্ষন দেখা দিতে পারে। যেমনঃ বিশ্রামে অসুবিধা ও আরামদায়ক অবস্থায় থাকতে না পারা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, তলপেট ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।

তবে শুধু এসব লক্ষণগুলো দেখা গেলেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে কিডনিতে পাথর হয়েছে, কারণ মূত্রনালি বা কিডনিতে রোগের সংক্রমণ হলেও এসব লক্ষণ দেখা যায়। তাই একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে সঠিকভাবে রোগ নির্নয় করা গুরুত্বপূর্ন।

কিডনিতে পাথর হওয়া সনাক্ত করাঃ

যদি আপনি সন্দেহ করেন যে উপরের লক্ষণগুলো আপনার সাথে মিলে যায় এবং আপনার কিডনিতে
পাথর থাকতে পারে, তাহলে একজন ডাক্তারের সহায়তায় আপনি কিডনি ডায়গনোসিস করতে পারেন।
এর মধ্যে রয়েছেঃ

ইমেজিং টেস্টঃ

এক্সরেঃ বেশিরভাগ কিডনির পাথরই এক্সরে দেখে শনাক্ত করা যায় বিশেষ করে যেসব পাথরে ক্যালসিয়াম থাকে।

আল্ট্রাসাউন্ডঃ এর মাধ্যমে কিডনির অবস্থা স্ক্রিনে দেখা যায় এবং বড় আকারের পাথরও শনাক্ত করতে পারে।

সিটি স্ক্যানঃ এর মাধ্যমে কিডনির ভেতরের বিস্তারিত অবস্থার ছবি দেখা যায় এবং সব ধরণের পাথর শনাক্ত করা যায়।

প্রস্রাব পর্যবেক্ষনঃ প্রস্রাবের স্যাম্পল থেকে এতে থাকা লোহিত ও শ্বেত রক্ত কণিকা অথবা ক্রিস্টাল দেখে কিডনির পাথর সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।

ব্লাড টেস্টঃ ব্লাড টেস্ট থেকে কিডনির কার্যক্রম মূল্যায়ন, ইনফেকশান এবং কিডনিতে পাথর আছে কি না সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।

শেষে বলা যায়, কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারনা থাকলে সহজেই শুরুর দিকে তা
শনাক্ত করে চিকিৎসা করা সম্ভব। আপনি যদি এসব লক্ষণ দেখতে পান তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের
পরামর্শ নেবেন। ডাক্তাররাই তখন কিডনিতে পাথর আছে কি না তা সঠিকভাবে শনাক্ত করে
চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। তাই আমাদের প্রাথমিক অবস্থাতেই কিডনির পাথর শনাক্ত করা
গেলে কিডনি সংক্রান্ত অনেক জটিলতা ও রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এবং সর্বোপরি সুস্থ থাকা
সম্ভব হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *