কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা 2023
কিডনি বা রেচনতন্ত্রের রোগ হলো একটি গুরুতর অবস্থা যা কিডনিকে সংক্রমিত করে। কিডনি হলো দেহের রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়ার মূল অঙ্গ। কিডনি রোগাক্রান্ত হলে আরও গুরুতর কিছু সমস্যা যেমন হাই ব্লাড প্রেশার, স্নায়ুর ক্ষতি, রক্তস্বল্পতা এমনকি কিডনি ফেইলিয়ার হতে পারে। যদিও কিডনি রোগের জন্য মেডিকেল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন, তবে কিছু ঘরোয়া সমাধানের মাধ্যমেও কিডনি রোগের বিস্তার কমানো এবং ভালো রাখা যায়।
এই আলোচনায় আমরা কিডনি রোগের এমন কিছু ঘরোয়া সমাধান আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা কিডনির জন্য খুব প্রয়োজনীয়। এটি দেহ থেকে টক্সিন ও বর্জ্য বের করে দেয় এবং কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। সাধারণত প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে একজন মানুষের বয়স, ওজন এবং দৈনিক কাজের ওপর নির্ভর করে পানি পানের মাত্রা পরিবর্তন হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিডনির পাশাপাশি সর্বোপরি সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ন। যেসব খাবারে অতিরিক্ত লবন, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে সেগুলো কিডনির ওপর চাপ তৈরি করে। এর পরিবর্তে সেসব খাবার খান যেসবে ফল, শাকসবজি, শস্য এবং মাইল্ড প্রোটিন বেশি থাকে। এটি কিডনি রোগের বিস্তার ঠেকাতে সাহায্য করে।
পরিমিত লবনঃ অতিরিক্ত লবন খেলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে গিয়ে কিডনিতে চাপ পড়ে। তাই অতিরিক্ত লবন এবং প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া ত্যাগ করা উচিত কারণ এসবে অনেকসময় সোডিয়াম বেশি থাকে। এর পরিবর্তে খাবারে বিভিন্ন মশলা যোগ করা যেতে পারে।
পরিমিত প্রোটিন গ্রহনঃ প্রোটিন সর্বোপরি সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অতিরিক্ত গ্রহন করলে কিডনিতে চাপ পড়ে। কিডনি স্বাভাবিক কর্মক্ষম রাখতে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া যাবে না। এর পরিবর্তে কম প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন মাছ, মুরগি, ডাল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনঃ
ব্লাড সুগার হাই থাকা কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যকর ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম ও মেডিসিনের মাধ্যমে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
ব্যায়ামঃ
নিয়মিত ব্যায়াম করা সর্বোপরি সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ব্যায়াম দেহে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের ঝুঁকি কমায়।
ধূমপান ত্যাগঃ
ধূমপান রক্তনালির ক্ষতি করে এবং কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। ধূমপান ত্যাগ করা কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
চাপ নিয়ন্ত্রনঃ
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা কিডনিসহ সর্বোপরি সুস্থ্যতার জন্য জরুরি। মেডিটেশান, যোগব্যায়াম ও ব্রীদিং এক্সারসাইসের মাধ্যমে মানসিক চাপ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হার্বালঃ
কিছু হার্বাল যেমন ড্যান্ডেলিয়ন, নেটল পাতা ও কর্ন সিল্ক কিডনির জন্য উপকারী। তবে এসব হার্বাল ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত কারণ অনেকসময় এতে পার্শ প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
আকুপাংচারঃ
আকুপাংচার একটি ট্রেডিশন্যাল চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে দেহের কিছু নির্দিস্ট প্রেশার পয়েন্টে সুঁই ফোটানো হয়। এটি ব্যথা ও প্রদাহ কমায় যা কিডনির জন্য উপকারী।
হিট থেরাপিঃ
কিডনি সংক্রান্ত ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে হিট থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যথা আক্রান্ত স্থানে একটি গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড ২০-৩০ মিনিট ধরে চাপ দিয়ে রাখতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন প্রায় ৭-৮ ঘন্টা ঘুম দেহকে রিফ্রেশ করে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে।
শেষে বলা যায়, ঘরোয়া সমাধানের পাশাপাশি কিডনি রোগের ক্ষেত্রে অনেকসময় মেডিকেল ট্রিটমেন্টও প্রয়োজন হয়। কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। সাথে সাথে কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলা যেমন স্বাস্থ্যকর ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ মুক্ত থাকা ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি।