বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়া উপায়

নিজ সন্তানদেরকে সর্দি-কাশিতে ভুগতে দেখা একজন অভিভাবকের পক্ষে সহজ ব্যাপার নয়। ঠাণ্ডার কারণে আপনার শিশু অস্বস্তি বোধ করতে পারে এবং তার ঘুম ও ক্ষুধার সমস্যা হতে পারে। যদিও সাধারণ ঠান্ডার জন্য অনেক ওভার-দ্য-কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশান ছাড়া ব্যাবহার করা যায় এমন ওষুধ পাওয়া যায়, তবে সন্তানের ঠাণ্ডাজনিত সর্দি নিরাময়ের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করাই উত্তম। এই নিবন্ধে আমরা শিশুদের সর্দি-কাশির জন্য কিছু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

শিশুকে হাইড্রেটেড রাখুনঃ

আপনার সন্তানের সর্দি হলে তখন তাকে হাইড্রেটেড রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা শ্লেষ্মাকে পাতলা করতে এবং গলার জমাট ভাব দূর করতে সাহায্য করতে পারে। শিশুকে মধুমিশ্রিত পানি, স্যুপ বা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করতে উত্সাহিত করুন। আপনার শিশুকে চিনিযুক্ত পানীয়, সোডা বা ড্রিংক্স দেওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশনকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

হিউমিডিফায়ার ব্যাবহার করুনঃ

শিশুদের রুমে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা তাদের কাশি প্রশমিত করতে এবং শ্লেষ্মা আলগা করতে সাহায্য করতে পারে। শুষ্ক বায়ু গলা এবং নাসিকায় অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং ঠান্ডার উপসর্গ আরও খারাপ করে তোলে। হিউমিডিফায়ার বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করে, যা শ্বাস নেওয়া সহজ করে তোলে। তবে ব্যাকটেরিয়া এবং মোল্ডের বৃদ্ধি রোধ করতে নিয়মিত হিউমিডিফায়ার পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।

চিকেন স্যুপঃ

চিকেন স্যুপ বহু প্রজন্ম ধরে সর্দি-কাশির জন্য একটি জনপ্রিয় খাবার এবং ঠান্ডার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার। স্যুপের গরম ঝোল গলা ব্যথা প্রশমিত করে এবং সাথে থাকা শাকসবজি ও মুরগি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে। মুরগি ও শাকসবজি বা চিকেন স্যুপ পাউডার দিয়ে আপনি বাসায় সহজেই চিকেন স্যুপ তৈরি করতে পারবেন।

স্যালাইন ড্রপঃ

স্যালাইন ড্রপ শিশুর নাক থেকে শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে। আপনি দোকান থেকে স্যালাইন ড্রপ কিনতে পারেন বা এক কাপ গরম পানিতে এক চতুর্থাংশ চা চামচ লবণ দ্রবীভূত করে বাসায় নিজেই তৈরি করতে পারেন।এরপর ড্রপার দিয়ে শিশুর নাকে কয়েক ফোঁটা স্যালাইন ড্রপ দিন এবং নাকে টেনে নিতে বলুন।

গরম সেঁকঃ

গরম সেঁক দেয়া বন্ধ নাক খুলতে এবং গলা ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। একটি ওয়াশক্লথ গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন, এরপর এটি ভাঁজ করে আপনার সন্তানের কপালে, গালে বা গলায় দিয়ে রাখুন। হিটিং প্যাড বা গরম পানির বোতলও ব্যবহার করতে পারেন, তবে ত্বকের পোড়া প্রতিরোধ করার জন্য সেটি একটি তোয়ালে দিয়ে মুড়ে রাখতে ভুলবেন না।

বিশ্রামঃ

বিশ্রাম ঠান্ডা থেকে সেরে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঠান্ডায় আক্রান্ত হলে আপনার শিশুকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে দিন। এটি তাদের শরীরকে ঠাণ্ডাজনিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করবে।

মধু ব্যবহার করুনঃ

মধু একটি প্রাকৃতিক কাশি দমনকারী এবং এটি গলা ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। আপনি আপনার শিশুকে প্রতিদিন এক চা চামচ মধু দিতে পারেন। মধু গরম পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়েও দিতে পারেন। তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কখনোই মধু দেবেন না, কারণ এটি তাদের জন্য বটিউলিজম এর কারণ হতে পারে।

ইউক্যালিপটাস অয়েলঃ

ইউক্যালিপটাস তেল নাক বন্ধ ও গলার জমাট বাধা উপশম করতে এবং শ্বাসনালী খুলতে সাহায্য করতে পারে। এক বাটি গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করুন, তারপর আপনার শিশুকে এর বাষ্প শ্বাসের সাথে নিতে দিন। আপনি নারকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করে সেটি শিশুর বুকে ঘষলেও তা শ্বাস নেয়া সহজ করতে পারে।

আদাঃ

আদার প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি কাশি এবং গলা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। তাজা আদার শিকড় গরম পানিতে ভিজিয়ে আদা চা বানাতে পারেন। অতিরিক্ত স্বাদ এবং স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য মধু এবং লেবু যোগ করতে পারেন।

শেষে বলা যায়, শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত সর্দি কাশি নিরাময়ের জন্য অনেক ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ পাওয়া গেলেও, ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্যাবহার করাই সহজ। আপনার শিশুকে ঠান্ডার সমস্যা থেকে মুক্ত করতে আমাদের উপরে আলোচিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো ব্যাবহার করতে পারেন, তবে যদি ঠান্ডার সমস্যা না কমে এবং লেগেই থাকে তখন অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে পরামর্শ নিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *