কিডনি রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার 2023

কিডনি যখন তার কাজ ঠিকমতো করতে সক্ষম হয় না তখনই বোঝা যায় যে হয়তো কিডনিতে রোগের সংক্রমণ হয়েছে। কিডনি দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ যা রক্ত থেকে বর্জ্য ফিল্টার করে এবং দেহের তরল পদার্থ সমূহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। যখন কিডনি বিকল বা রোগে আক্রান্ত হয় তখন দেহের বর্জ্য পদার্থগুলো জমা হওয়া শুরু করে এবং বিভিন্ন সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ আর্টিকেলে আমরা কিডনি রোগের লক্ষণগুলো এবং কিডনি রোগের চিকিৎসা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।

কিডনি রোগের লক্ষণঃ

কিডনি রোগের লক্ষণগুলো সংক্রমণের মাত্রার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রোগ গুরুতর না হওয়ার আগে লক্ষণগুলোও প্রকাশ পায় না। কিডনি রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ

ফোলা ভাবঃ কিডনি রোগের ফলে পা, পায়ের পাতা, গোড়ালি এবং হাত ফুলে উঠতে পারে। কারণ তখন দেহে বেশি পরিমান তরল বর্জ্য জমা হয় এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফুলে ওঠে।

অবসন্নতাঃ কিডনি রোগের ফলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়। কারণ তখন erythropoietin নামক হরমোন দেহে পর্যাপ্ত পরিমানে তৈরি হয় না, যা মূলত দেহে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।

শ্বাসকষ্টঃ যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না তখন শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কারণ ফুসফুসে তখন অতিরিক্ত পানি জমে যায়।

প্রস্রাবে পরিবর্তনঃ কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে প্রস্রাবে পরিবর্তন যেমন প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা, ফেনাযুক্ত এবং অতিরিক্ত প্রস্রাব হতে দেখা যায়।

চুলকানিঃ দেহে বর্জ্য জমে থাকার ফলে ত্বকে চুলকানি ও শুষ্কতা দেখা দেয়।

বমিঃ কিডনি রোগের ফলে বমি এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। কারণ দেহ তখন বমির সাথে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে চেষ্টা করে।

উচ্চ রক্তচাপঃ কিডনি দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না তখন ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়।

কিডনি রোগের চিকিৎসাঃ

কিডনি রোগের চিকিৎসা এর কারণ ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাপনে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে রোগ গুরুতর হলে মেডিসিন ও ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে।

মেডিসিনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ ও রোগের বৃদ্ধি রোধ করতে মেডিসিন ব্যাবহার করা হয়। ব্লাড প্রেশার ও সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে এবং কোলেস্টেরল কমাতে মেডিসিন প্রেসক্রাইব করা হয়।

ডায়ালাইসিসঃ যখন কিডনি দেহ থেকে বর্জ্য বের করতে পারে না তখন ডায়ালাইসিস করা হয়। ডায়ালাইসিস দুই ধরণের হয়, hemodialysis এবং peritoneal dialysis। প্রথম উপায়ে দেহের রক্তকে ফিল্টার মেশিনে পাঠিয়ে বিশুদ্ধ করে পুনরায় দেহে সঞ্চালিত করা হয়। দ্বিতীয় উপায়ে ক্যাথেটার দিয়ে ডায়ালাইসিসি সলিউশান তলপেটে জমা করা হয় যা রক্ত থেকে বর্জ্য বের করে দেয়।

কিডনি প্রতিস্থাপনঃ কিছু ক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় একজন কিডনি দাতা থেকে সুস্থ কিডনি রোগির দেহে প্রতিস্থাপিত করা হয়।

কিডনি রোগের প্রতিরোধঃ

কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার বিভিন্ন উপায় আছে যা আমাদের কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারে। নিচে এসব প্রতিরোধের উপায়গুলো আলোচনা করা হলোঃ

ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করাঃ ব্লাড সুগার বেশি ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে কিডনি ভালো রাখা যায়।

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রনে রাখাঃ ব্লাড প্রেশার হাই থাকলেও কিডনি ড্যামেজ হতে পারে। তাই ডায়েট, ব্যায়াম ও মেডিসিনের মাধ্যমে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রনঃ ওভার ওয়েট বা স্থূলতা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ধূমপান ত্যাগঃ ধূমপান কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপায়ী হয়ে থাকলে তা বর্জন করতে হবে।

শেষে বলা যায়, কিডনি রোগের ফলে দেহে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই কিডনি রোগের যেকোনো লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কিডনি রোগের বিভিন্ন কারণ হতে পারে। তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, মেডিসিন, ডায়ালাইসিস এবং কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার বিভিন্ন উপায় যেমন রক্তচাপ ও সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ এবং কিডনির ক্ষতি করে এমন মেডিসিন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়। অতএব বলা যায় সঠিক ব্যাবস্থাপনা ও চিকিৎসার মাধ্যমে একজন কিডনি রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *