বুকে ঠান্ডা লাগলে করণীয়

বুকের জমা সর্দি, যা তীব্র অবস্থায় ব্রঙ্কাইটিস নামেও পরিচিত, সেটি হলো শ্বাসতন্ত্রের এমন একটি অবস্থা যা ফুসফুসের দিকে শ্বাসনালীতে প্রদাহ এবং জ্বালা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয় এবং কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে কফ জমাট বাধা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যদিও বুকে সর্দি-কাশির জন্য প্রচলিত চিকিত্সার মধ্যে ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা হয়,তবে এর চিকিৎসায় প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোও সমানভাবে কার্যকর এবং সহজ। এই নিবন্ধে আমরা প্রাকৃতিকভাবে বুকের ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু কার্যকর উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

হাইড্রেটেড থাকুনঃ

বুকের সর্দির লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে, যা কফ বের করে দেয় এবং বুকের কফ জমাট বাধা কমায়। পানি, বিভিন্ন ধরণের হার্বাল চা ইত্যাদি তরল হাইড্রেটেড থাকার জন্য দুর্দান্ত বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

মেন্থলের ভাপ নেয়াঃ

মেন্থলের ভাপ নেয়া বুকের কফ জমাট বাধা দূর করার এবং শ্লেষ্মা আলগা করার একটি সহজ ও কার্যকর উপায়। ওষুধের দোকানে সহজেই মেন্থল কিনতে পাওয়া যায়। এর জন্য একটি মগে গরম পানি নিয়ে তাতে কয়েক টুকরো মেন্থল দিন।এরপর মগের মুখে কোন শক্ত কাগজ দিয়ে চোঙার মতো আটকিয়ে নিন যেনো ধোঁয়া বেরিয়ে যেতে না পারে। এরপর কাগজটি সামান্য খুলে নাক দিয়ে মেন্থলের গরম ভাপ নিন এবং মুখ দিয়ে বের করুন।প্রায় 10 মিনিটের জন্য এভাবে গভীরভাবে নাক দিয়ে মেন্থলের ভাপ নিন এবং তারপরে মিশ্রণটি ফেলে দিয়ে নাক ও গলা পরিষ্কার করে নিন।

আদাঃ

আদা একটি প্রাকৃতিক প্রদাহ বিরোধী যা শ্বাসনালীর প্রদাহ ও জ্বালা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি রঙ চা তৈরি করে তাতে তাজা আদা যোগ করতে পারেন, অথবা আপনি আপনার খাবারে আদা যোগ করতে পারেন।

মধুঃ

মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি গলা ব্যথা প্রশমিত করতে ও কাশি কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি আপনার চায়ে এক চামচ মধু যোগ করতে পারেন। এছাড়া পানি এবং লেবুর সাথে মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে পান করতে পারেন।

ইউক্যালিপটাস অয়েলঃ

ইউক্যালিপটাস তেল একটি প্রাকৃতিক ডিকনজেস্ট্যান্ট যা বুকের জমাট বাধা কফ দূর করে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আপনি এক বাটি গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করে নাক দিয়ে ভাপ নিতে পারেন। অথবা নারিকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করে এটি আপনার বুকে ম্যাসাজ করতে পারেন।

রসুনঃ

রসুন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে খুবই সহায়ক। আপনি আপনার খাবারে রসুন যোগ করতে পারেন বা রসুনের কয়েকটি কোয়া নিয়ে লবঙ্গ পানিতে প্রায় 10 মিনিট সিদ্ধ করে রসুনের চা বানিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়া রসুন সামান্য তেলে ভেজে নিয়েও খাওয়া যায়।

বিশ্রামঃ

বুকের ঠাণ্ডা থেকে সেরে উঠার ক্ষেত্রে বিশ্রাম নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করা এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দ্রুত সেরে ওঠতে সাহায্য করবে।

উপসংহারে বলা যায়, কেবল ওষুধ নির্ভর না হয়ে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকারও অনুসরণ করা যায় যা বুকে সর্দির লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। প্রচুর তরল পান করা, মেন্থলের ভাপ নেওয়া, আদা, মধু, ইউক্যালিপটাস তেল, রসুন এবং বিশ্রাম নেয়া এ সবই ঘরোয়া ও প্রাকৃতিকভাবে বুকের ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর ও সহজ উপায়। তবে যদি এসব উপায় ব্যাবহারের পরেও আপনার উপসর্গগুলি সেরে না ওঠে বা আরও খারাপ হয়, তাহলে অবশ্যই দ্রুত একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *